27 November 2017

চট্টগ্রামে দ্বিতীয় কারাগার তৈরির প্রস্তাব

ধারণক্ষমতার তিন গুণ বন্দী থাকছে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে। জায়গা না থাকায় কারাগারের ভেতরে বন্দীদের রাখার জন্য ভবন নির্মাণেরও সুযোগ নেই। একই অবস্থা কক্সবাজার জেলা কারাগারেরও। সেখানে ধারণক্ষমতার প্রায় ছয় গুণ বন্দী রয়েছে। দুটি কারাগারেই সংক্রামক ব্যাধিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন বন্দীরা। তাঁদের মানসিক বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে। এতে বন্দীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। এ অবস্থায় জরুরি ভিত্তিতে দুটি কারাগারের আবাসন সমস্যা দূর করতে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার-২ নামে নতুন কারাগার নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছেন কারা মহাপরিদর্শক।
গত সেপ্টেম্বর মাসে স্বরাষ্ট্রসচিবের কাছে এ-সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠান কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন। চিঠির অনুলিপি সম্প্রতি চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে এসে পৌঁছায়। এরপর কারা কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করে নতুন কারাগারের জন্য জায়গা খুঁজতে শুরু করেছে।
কারা মহাপরিদর্শকের ওই চিঠিতে বলা হয়, কারা বিধি অনুযায়ী ২ হাজার ধারণক্ষমতার একটি কেন্দ্রীয় কারাগারের জন্য ন্যূনতম ৩০ একর জমির প্রয়োজন। কিন্তু চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের আয়তন ১৪ একর। ১ হাজার ৮৫৩ বন্দী ধারণক্ষমতার এই কারাগারে গড়ে ৬ হাজার বন্দী থাকে (গতকাল ছিল ৬ হাজার ৬৮৮ বন্দী)। কারাগারে নতুন ভবন নির্মাণ করে বন্দী ধারণক্ষমতা বাড়ানোর সুযোগ নেই।
একই অবস্থা কক্সবাজার জেলা কারাগারেও। চট্টগ্রাম থেকে ১৪৩ কিলোমিটার দূরে কক্সবাজার জেলা কারাগারের আয়তন ১২ দশমিক ৮৬ একর। ৫০০ বন্দীর ধারণক্ষমতার এই কারাগারে গড়ে প্রতিদিন ২ হাজার ৭০০ থেকে ৩ হাজার বন্দী থাকছে। জায়গার অভাবে এখানেও বন্দীদের রাখার জন্য নতুন ভবন নির্মাণ করার সুযোগ নেই। চিঠিতে বলা হয়, কারাগার দুটিতে জায়গার অভাবে উৎপাদন বিভাগের কার্যক্রম (বন্দীদের দিয়ে বাগান করা, পুকুরে মাছ চাষ ও আসবাব তৈরি) বন্ধ রয়েছে। কারা বিধি অনুযায়ী বন্দীদের প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা তথা বন্দীদের মানসিক বিকাশের জন্য খেলাধুলার সুযোগ দিতে না পারায় প্রশাসনিক সমস্যা হচ্ছে। স্বল্প পরিসরে অধিক বন্দী আটক রাখায় তারা নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
কারা মহাপরিদর্শক ৪ হাজার বন্দীর ধারণক্ষমতার নতুন একটি কেন্দ্রীয় কারাগার নির্মাণ করার প্রস্তাব দিয়েছেন। চট্টগ্রাম থেকে ৪৩ কিলোমিটার দূরে পটিয়া বা সুবিধাজনক কোনো স্থানে ন্যূনতম ৫০ একর জায়গা অধিগ্রহণ করে নতুন কারাগার নির্মাণের কথা বলেছেন তিনি।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক ইকবাল কবীর চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ভূমি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে তাঁরা পটিয়া ও সাতকানিয়ায় জায়গা খুঁজতে শুরু করেছেন। এর মধ্যে পটিয়ার কাছে সাতকানিয়া উপজেলায় ৫০ একর সরকারি জায়গা থাকার কথা তাঁকে জানিয়েছেন অতিরিক্ত চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক (ভূমি অধিগ্রহণ) মো. মমিনুর রশিদ। এ ছাড়া পটিয়াতেও কারাগারের উপযোগী জায়গা খুঁজছেন তাঁরা।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক বলেন, কারাগারে বন্দীদের মধ্যে ৭৫০ জন কয়েদি (সাজাপ্রাপ্ত বন্দী) রয়েছে। নতুন কারাগার নির্মিত হলে তাদের সেখানে রাখা যাবে। যেসব বন্দীর নিয়মিত হাজিরা নেই তাদেরও নতুন কারাগারে রাখা হবে। এতে চট্টগ্রাম কারাগারের ওপর চাপ কমবে। বন্দীদের ঠাসাঠাসি করে থাকতে হবে না। এ ছাড়া কক্সবাজার কারাগারে থাকা বন্দীদেরও নতুন এই কারাগারে রাখা যাবে।
কারাগারকে সতি৵কার অর্থে সংশোধনাগার হিসেবে গড়ে তুলতে হলে বন্দীদের মানসিক বিকাশের জন্য খেলাধুলাসহ নানা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রাখতে হবে বলে জানান কারা প্রশাসনের সাবেক উপমহাপরিদর্শক শামসুল হায়দার সিদ্দিকী। মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কারাগারে বন্দীদের এমনভাবে থাকবে যাতে কারাগারে নেওয়া প্রশিক্ষণ দিয়েই তাঁরা মুক্তি পাওয়ার পর জীবিকা নির্বাহ করতে পারেন। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে যেহেতু সব সময় ধারণক্ষমতার কয়েক গুণ বন্দী থাকে, সেখানে নতুন আরেকটি কারাগার নির্মাণ আসলেই জরুরি।

0 comments:

Post a Comment