27 November 2017

যে শহরে পড়ে আছে টনের পর টন হীরা!

বাঁ হাতের অনামিকায় হীরার আংটি মানেই তো বিয়ের বাদ্যি বেজে ওঠা। হীরাখচিত গয়নার প্রতি আকর্ষণ অবশ্য এমনিতেও কম নয়। এখন অবশ্য হীরার পোশাকও মেলে। চাই কী, হীরার গ্রহও আছে! দুঃখের বিষয়, পৃথিবী থেকে ৪০ আলোকবর্ষ দূরে বলে সে হিরে জোগাড়ের চেষ্টা আপাতত করা সম্ভব নয়। কিন্তু জানেন কি, এই পৃথিবীতেই এমন একটি শহর আছে, যার পরতে পরতে ছড়িয়ে লাখ লাখ হীরা!

বিস্ময়ে চোখ কপালে তুলে ফেলেছেন? ভালো! সে কর্ম শেষ হলে এবার ঘুরে আসুন জার্মানির নর্দলিনগেন শহর। বিবিসির প্রতিবেদক ম্যাথু ভিকেরি সম্প্রতি নর্দলিনগেন ঘুরে এসে জানিয়েছেন অত্যাশ্চর্য সেই কাহিনি। ব্যাভারিয়া অঞ্চলের প্রাচীন এ শহরে গথিক-স্থাপত্যরীতি মেনে বানানো সেন্ট জর্জেস গির্জা সিঁড়ি ভেঙে টাওয়ারে ওঠার সময় ভিকেরি খেয়াল করেন, সূর্যের আলোয় পাথুরে সিঁড়িগুলো কেমন ঝিক করে উঠছে। যেটা একেবারেই অপ্রত্যাশিত।
গির্জাটি বানানোর সময়কাল ১৪২৭-১৫০৫ খ্রিষ্টাব্দ। এত পুরোনো গির্জার সিঁড়ি কালচে-বাদামি রং ধারণ করার কথা, তা না হয়ে দ্যুতি ছড়াচ্ছে! কারণ ব্যাখ্যা করলেন গির্জার টাওয়ারের রক্ষী হোর্স্ট লেনার, ‘গোটা টাওয়ারটি বানানো হয়েছে সুভাইট পাথর দিয়ে। এর ভেতরে রয়েছে অনেক হীরা। ভাগ্যিস হীরাগুলো অনেক ছোট। তা না হলে এই গির্জা কবেই ভেঙে ফেলা হতো!’
লেনার কৌতুক করলেও কথাটি কিন্তু মিথ্যা নয়। লিখিত ইতিহাস অনুযায়ী নর্দলিনগেনের গোড়াপত্তন নবম শতকে। শহরটি তৈরির সময় সেখানকার স্থানীয় লোকজন জানত না, যে পাথর দিয়ে শহর গড়ছে তারা, তার মধ্যে রয়েছে ছোট ছোট অনেক হীরা। এই পাথর এল কোথা থেকে?
প্রায় দেড় কোটি বছর আগে নর্দলিনগেন অঞ্চলে আছড়ে পড়েছিল এক কিলোমিটার প্রশস্তের একটি গ্রহাণু। সেকেন্ডে ২৫ কিলোমিটার গতিতে আঘাত হানা সেই গ্রহাণু সেখানে ২৬ কিলোমিটার অঞ্চল নিয়ে একটি গর্তের সৃষ্টি করে। আঘাতের চাপে ও তাপে কার্বন রূপান্তরিত হয় ভীষণ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র হীরকে, যা মরিচের গুঁড়োর মতো মিশে গেছে সুভাইট পাথরের সঙ্গে। হীরাগুলো এতই ছোট যে সবই আকারে ০.২ মিলিমিটারের কম। খালি চোখে দেখা খুব কঠিন।

0 comments:

Post a Comment