working...

working...

working...

working...

working...

working...

working...

working...

working...

working...

Showing posts with label বাংলাদেশ. Show all posts
Showing posts with label বাংলাদেশ. Show all posts

26 July 2020

১৯৭১ মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে অন্যতম এক বীরের গল্প [ মুক্তিযোদ্ধা পর্ব (০৫)]

               জীবনের দুই বার মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসা, বীর সেনানী, যশোর জেলার মনিরামপুর উপজেলার হানুয়ার গ্রামের কৃতী সন্তান, সদা হাস্যজ্জল, রসিক ও খো
লা মনের মানুষ,আল্লাহ ভক্ত, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলী। ১৯৬৫  সালে পাকিস্তানের মুজাহিদ বাহিনী হয়ে ভারতের বিরুদ্ধে তিনি যুদ্ধ করেছিলেন। তারপর ১৯৭১ সালে মহান  মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতে প্রশিক্ষণ নেওয়া কালীন সময়ে পাকিস্তানের চর সন্দেহে ভারতীয় সেনাবাহিনীর হাতে আটক হন। ভারতীয় সেনাবাহিনী তাদের হেডকোয়ার্টারে নিয়ে তাকে নির্মম অত্যাচার করেন এবং প্রকাশ্যে গুলি করার ঘোষণা দেন। পরে আরো একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাক্তার এম এ সামাদ এর সহযোগিতায় এবং বাংলাদেশি নেতাদের সুপারিশে ও তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে তাকে মুক্ত করা হয়। সেখান থেকে ইপিআর বাহিনীর সাথে যশোর জেলায় যুদ্ধ করার জন্য পাঠানো হয়। তিনি যশোর জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে মোট ৬টি যুদ্ধে অংশ গ্রহন করেছেন এবং কিছু যুদ্ধের অপারেশন পরিকল্পনা করেন। পিতার সাথে গোপনে দেখা করতে এসে স্থানীয় রাজাকারের হাতে আটক হন। এবং মৃত্যুর জন্য তাকে প্রস্তুত করা হয়। খুব সুক্ষ মেধা ও কৌশল খাটিয়ে তিনি পালিয়ে ঝাঁপা বাঁওড় পার হয়ে জীবন রক্ষা করেন।  জাতির এই সব শ্রেষ্ঠ সন্তানদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় যশোর জেলা প্রথম শত্রুমুক্ত হয়। মহান আল্লাহর নিকট এই বীর যোদ্ধার সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু জন্য প্রার্থনা করবেন।

লেখকঃ তানভীর আহমেদ

১৯৭১ মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে অন্যতম এক বীরের গল্প [ মুক্তিযোদ্ধা পর্ব (০৪)]

                           প্রয়াত বীরমুক্তিযোদ্ধা ডাক্তার শামসুল হক। যশোর জেলার মনিরামপুর উপজেলার পানিছত্র গ্রামের কৃতি সন্তান। একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং স্পষ্টভাষী সাহসী যোদ্ধা। অন্যায়ের সাথে আপোষহীন একজন মানুষ। দেশমাতাকে পাক হানাদার বাহিনী থেকে মুক্ত করার জন্য ভারতে প্রশিক্ষণ নিতে যান। প্রশিক্ষণ শেষে তিনি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তার সহধর্মিনী জাহানারা মুক্ত, একজন প্রগতিশীল মানুষ এবং বাস্তববাদী লেখিকা। তাঁর কলেজ পুড়ুয়া, ক্রিকেট প্রেমী ছোট ছেলে ফজলুল হক মনা ২০০২ সালে অকাল মৃত্যু বরন করেন। ২০০৬ সালে এই বীর মুক্তিযোদ্ধা পরলোকগমন করেন। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানের আত্মার শান্তি কামনা করে সকলে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করবেন।


লেখকঃ তানভীর আহমেদ

১৯৭১ মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে অন্যতম এক বীরের গল্প [ মুক্তিযোদ্ধা পর্ব (০৩)]

                         পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও বাংলাদেশের রাজাকার বাহিনীর কাছে, যিনি ছিলেন ডিনামাইট ও সিংহের হুংকারের মত। যিনি দুর্দান্ত গতিতে, অপরিসীম সাহসিকতা নিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তেন, তিনি আর কেউ নন, তিনি যশোর জেলার মনিরামপুর উপজেলার খালিয়া গ্রামের কৃতি সন্তান, অত্যন্ত সাহসী ও শক্তিশালী, জাদরেল সেনানী, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন (ওয়ান টু)। ১৯৭১ সালে মাত্র ১৮ বছর বয়সে দেশ মাতৃকার টানে দেশমাতাকে মুক্ত করতে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। ১৯৬৮ সালে আনসার বাহিনীর ট্রেনিং নেওয়া থাকায় মুক্তিযুদ্ধের সময় অন্যান্য
যোদ্ধাদের প্রাথমিক প্রশিক্ষণ দিতেন। তিনি অত্যন্ত দক্ষতার সাথে যুদ্ধ করতেন। ২৬ শে মার্চে যশোর ক্যান্টনমেন্টে প্রতিরোধযুদ্ধ থেকে শুরু করে ১৬ ই ডিসেম্বর পর্যন্ত সশরীরে যুদ্ধের ময়দানে ছিলেন। রাজগঞ্জ মনিরামপুর,অভয়নগরসহ যশোরের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রায় ১০ টি সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেন। দেশের প্রতি তাঁর এতো টান ছিল এবং যুদ্ধের প্রতি এতটাই নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন যে,নিজের আত্মীয় স্বজন যারা যুদ্ধের বিপক্ষে ছিল তাদের কেও ছাড় দেননি। যুদ্ধের সময় তার কানের খুব সন্নিকট দিয়ে গুলি চলে গিয়েছিল। অল্পের জন্য প্রাণ রক্ষা পেলেও রক্ষা পাইনি তাঁর কান। একটি কানে শুনতে পান না। পরিবারের সদস্য সংখ্যা বেশি হলেও থাকেন বেশ ছোট একটি বাড়িতে। তাঁর ওয়ান টু নাম নিয়ে অনেকের মনে বেশ কৌতূহল জাগে। নামের পিছনে কিছু গল্প শোনা যায় যেমন তাকে হত্যা করার জন্য হুলিয়া জারি করা হয় তখন ঝাঁপা গ্রামের আর একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা বিমানবাহিনীর উইনিং কমান্ডার ফজলুর রহমান তাঁর নাম পরিবর্তন করে (1, 2) রাখেন। আরো শোনা যায় যুদ্ধকালীন সময়ে কমান্ডার ফায়ারিং এর জন্য কাউন্টডাউন করার সময় ওয়ান টু থ্রি বলার আগেই তিনি শত্রুপক্ষকে ফায়ার করতেন। তাই তার নাম হয়েছিল ওয়ান টু। তিনি ক্যাঙ্গারু নামেও বেশ পরিচিত। এ নামের পিছনেও একটা ইতিহাস আছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর যুদ্ধাপরাধীদের ধরার জন্য মনিরামপুর উপজেলার ১৭ টি ইউনিয়নে সাতদিন করে কমান্ডো অভিযান চালান তখন থেকেই তার নাম ক্যাঙ্গারু হয়। বর্তমানে তিনি শারীরিকভাবে কিছুটা অসুস্থ। মহান আল্লাহর নিকট জাতির এই শ্রেষ্ঠ সন্তানের সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু জন্য প্রাণভরে প্রার্থনা করবেন।


লেখকঃ তানভীর আহমেদ

24 July 2020

১৯৭১ মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে অন্যতম এক বীরের গল্প [ মুক্তিযোদ্ধা পর্ব (০২) ]

                              দেশ মানে মা, আর সেই মাকে মুক্ত করতে, মায়ের ডাকে সাড়া দিয়ে, ব্যক্তিগত মোহ বিসর্জন দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন হানাদার বাহিনীর উপর। মা বাবা,অাত্বীয়স্বজনের ভালেবাসাকে জলাঞ্জলি দিয়ে ছুটে যান দেশ মাতৃকার টানে। মহান মুক্তিযুদ্ধের সূচনালগ্ন অতীত থেকেই তিনি মুক্তিযুদ্ধের সাথে অতপ্রোত ভাবে জড়িত। ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে সশরীরে উপস্থিত। মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগী ট্রেনার,একজন মুক্তিযোদ্ধা সংগঠক এবং রনাঙ্গানে যুদ্ধের নেতৃত্ব দানকারী সফল কমান্ডার,একজন গর্বিত পিতা, যশোর জেলার মনিরামপুর উপজেলার হানুয়ার গ্রামের কৃতিসন্তান,বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব ডা. এম এ সামাদ।                                             ১৯৭১ সালে ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে উজ্জীবিত হয়ে,২৫ মার্চ ভয়াল কালরাতের পাকবাহিনীর হাত থেকে পালিয়ে এসে মুক্তিযুদ্ধে যোগদেন এবং সংগঠিত করেন। ২৫ মার্চ রাতে পলাশী,ঢাকা থেকে ড্রেনের ভিতর দিয়ে রক্তের স্রোত হামাগুড়ি দিয়ে রমনা গিয়ে ওঠেন। কোনো রকম প্রাণ হাতে নিয়ে পায়ে হেঁটে বাড়ি ফেরেন। তারপর নিজের সাথে কয়েকজন কে নিয়ে ভারতে চলে যান। সেখানে
গিয়ে নিজেরা সংগঠিত হয়ে,ভারতীয়দের বাড়ি বাড়ি ঘুরে ঘুরে সাহায্য সহযোগীতা নিয়ে নিজেরাই যুদ্ধের প্রশিক্ষণ শুরু করেন। পরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সহযোগীতা বিহার রাজ্যে অফিসিয়ালি ট্রেনিং শুরু করেন।তিনি সহযোগী ট্রেনারের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের ১ম ব্যাচের গর্বিত সৈনিক।  অতপর তিনি ভারতে থেকেই পাকহানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেন। ভারতের নদীয়া, বনগা,পেট্রাপোল সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে যুদ্ধে অংশ গ্রহন করেন। পরে দেশে এসে যুদ্ধ করার দায়িত্ব পান।                               ৮ নং সেক্টরের কমান্ডার বীর উত্তম মেজর মোহাম্মদ আবুল মঞ্জুরের (এম.এ মঞ্জুর) নেতৃত্বে যশোর,মনিরামপুর, রাজগঞ্জ সহ বিভিন্ন অঞ্চলে যুদ্ধ করেন। যুদ্ধের সময় তিনি বিভিন্ন দলের কমান্ডার হিসাবে নেতৃত্ব পালন করেন, পাশাপাশি নতুনদের নিয়ে ব্যাচ তৈরী করতেন এবং প্রশিক্ষণের জন্য ভারতে পৌঁছে দিতেন। প্রায় ২০ টি সম্মুখ যুদ্ধে তিনি জীবন বাজি রেখে অংশ নেন। শরীরে এখনো ক্ষত চিহ্ন দৃশ্যমান। জাতির এ সকল শ্রেষ্ঠ সন্তানদের অপরিসীম সাহসিকতা ও নিরলস পরিশ্রমের ফলে যশোর প্রথম শত্রুমুক্ত হয়। যুদ্ধ পরর্বতী সময়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তে জুনিয়র কমিশন্ড অফিসার (J.C.O) হিসাবে মর্যাদা লাভ করেন। এবং সরকারি খরচে বিদেশ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে লে.কর্নেল হিসাবে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব আসে কিন্তু মা বাবার সম্মতি না থাকায় আর যাওয়া হয় না। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মনিরামপুর উপজেলার যুদ্ধাপোরাধীদের তালিকা করার প্রধান হিসাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। ২০১৪ সালে তিনি পবিত্র হাজ্ব পালন করেন। সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী মহান আল্লাহর নিকট জাতির এই শ্রেষ্ঠ সন্তানের সুস্থতা ও দীর্ঘায়ূ কামনার জন্য প্রার্থনা করবেন।

লেখনঃ তানভীর আহমেদ

23 July 2020

১৯৭১ মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে অন্যতম এক বীরের গল্প [ মুক্তিযোদ্ধা পর্ব (০১) ]

                মায়ের অশ্রুশিক্ত নয়ন , নববধূর মেহেদী রাঙ্গা হাতের বাঁধন, সন্তানের মায়াভরা মুখের হাসি উপেক্ষা করে, মৃত্যুর টিকিট হাতে নিয়ে, দেশ মাতৃকার টানে সেদিন যারা  যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিলেন তাঁরা বাঙ্গালি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান - রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা।
       ১৯৭১ সালে রাজাকার বাহিনীর হাতে অত্যাচারিত হয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে যোগদেন প্রথম শত্রুমুক্ত জেলা যশোরের মনিরামপুর উপজেলার রাজগঞ্জ, হানুয়ার গ্রামের কৃতিসন্তান, সৎ ও নির্ভীক, বীর মুক্তিযোদ্ধা এস এম কাওসর আহমেদ। ভারতের দেরাদুন থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে সাতক্ষীরা ভোমরা সিমান্ত এলাকায় অপারেশন শুরু করেন। তারপর যশোরের ছুটিপুর এলাকায় যুদ্ধ করেন। যে কোনো সময় বুলেট লাগতে পারে জেনেও তিনি কখনো পিছু হাটেননি। অন্যায়ের সাথে আপোষহীন, একজন দায়িত্ববান মানুষ। জনসেবা ও পরোপকারিতা তাঁর অন্যতম নেশা। তিনি মনিরামপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ড হিসাবে সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া জাতির এই শ্রেষ্ঠ সন্তানের দীর্ঘায়ূ, সুস্থতা ও মঙ্গল কামনার জন্য, মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ নিকট সকলে দোয়া চাইবেন।

লেখকঃ তানভীর আহম্মেদ



27 November 2017

পিলখানা হত্যা: দ্বিতীয় দিনের রায় পড়া শুরু

২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে তৎকালীন বিডিআরের সদর দপ্তর পিলখানায় নারকীয় হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় করা হত্যা মামলায় হাইকোর্টের রায় পড়া দ্বিতীয় দিনের মত শুরু হয়েছে। আজ সোমবার সকাল ১০টা ৫৩ মিনিটে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার রায় পড়া শুরু করেন। আজ পূর্ণাঙ্গ রায় পড়া শেষ হবে বলে জানান তিনি।

গতকাল বিচারপতি মো. শওকত হোসেনের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিশেষ বেঞ্চে মামলাটির রায় পড়া শুরু হয়। শুরুতে শওকত হোসেন রায় পড়েন। বেঞ্চের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার। বিকেল চারটার দিকে কালকের মতো রায় পড়া শেষ করা হয়।

পরে বিচারপতি মো. শওকত হোসেন জানান, আজ পূর্ণাঙ্গ রায় পড়া শেষ হবে।

এখন পর্যন্ত পড়া রায়ের পর্যবেক্ষণে নারকীয় এই হত্যাকাণ্ডকে নৃশংস ও বর্বরোচিত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আদালত বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় তৎকালীন ইপিআর পাকিস্তান বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। সীমান্ত রক্ষায় নিয়োজিত এই বাহিনী দেশে-বিদেশে সম্মানের সঙ্গে কাজ করেছে। কিন্তু ২০০৯ সালে পিলখানায় তৎকালীন বিডিআরের কিছু সদস্য আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। এই কলঙ্কচিহ্ন তাঁদের অনেক দিন বয়ে বেড়াতে হবে।

একসঙ্গে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাকে হত্যার নজির ইতিহাসে নেই। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দৃঢ় মনোবল নিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলায় যৌক্তিক পদক্ষেপ নিয়েছেন।

আসামিসংখ্যার দিক থেকে এই মামলা দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় মামলা। ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় ওই হত্যাযজ্ঞে ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন প্রাণ হারান। এই হত্যা মামলায় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর বিচারিক আদালত রায় দিয়েছিলেন। আজ হাইকোর্টের রায়ের মধ্য দিয়ে মামলাটির বিচারপ্রক্রিয়ার দুটি ধাপ শেষ হতে যাচ্ছে।

এ মামলায় আসামি ছিলেন ৮৪৬ জন। সাজা হয় ৫৬৮ জনের। তাঁদের মধ্যে বিচারিক আদালতের রায়ে ১৫২ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড, ১৬০ আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, ২৫৬ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড হয়েছিল। খালাস পেয়েছিলেন ২৭৮ জন। এরপর আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) হাইকোর্টে আসে। সাজার রায়ের বিরুদ্ধে দণ্ডিত ব্যক্তিরাও জেল আপিল ও আপিল করেন। ৬৯ জনকে খালাসের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করে। এসবের ওপর ২০১৫ সালের ১৮ জানুয়ারি হাইকোর্টে শুনানি শুরু হয়, শেষ হয় ৩৭০তম দিনে গত ১৩ এপ্রিল। সেদিন শুনানি শেষে আদালত মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখেন। এরপর হাইকোর্ট রায়ের জন্য ২৬ নভেম্বর তারিখ ধার্য করেন।

চট্টগ্রামে দ্বিতীয় কারাগার তৈরির প্রস্তাব

ধারণক্ষমতার তিন গুণ বন্দী থাকছে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে। জায়গা না থাকায় কারাগারের ভেতরে বন্দীদের রাখার জন্য ভবন নির্মাণেরও সুযোগ নেই। একই অবস্থা কক্সবাজার জেলা কারাগারেরও। সেখানে ধারণক্ষমতার প্রায় ছয় গুণ বন্দী রয়েছে। দুটি কারাগারেই সংক্রামক ব্যাধিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন বন্দীরা। তাঁদের মানসিক বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে। এতে বন্দীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। এ অবস্থায় জরুরি ভিত্তিতে দুটি কারাগারের আবাসন সমস্যা দূর করতে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার-২ নামে নতুন কারাগার নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছেন কারা মহাপরিদর্শক।
গত সেপ্টেম্বর মাসে স্বরাষ্ট্রসচিবের কাছে এ-সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠান কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন। চিঠির অনুলিপি সম্প্রতি চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে এসে পৌঁছায়। এরপর কারা কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করে নতুন কারাগারের জন্য জায়গা খুঁজতে শুরু করেছে।
কারা মহাপরিদর্শকের ওই চিঠিতে বলা হয়, কারা বিধি অনুযায়ী ২ হাজার ধারণক্ষমতার একটি কেন্দ্রীয় কারাগারের জন্য ন্যূনতম ৩০ একর জমির প্রয়োজন। কিন্তু চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের আয়তন ১৪ একর। ১ হাজার ৮৫৩ বন্দী ধারণক্ষমতার এই কারাগারে গড়ে ৬ হাজার বন্দী থাকে (গতকাল ছিল ৬ হাজার ৬৮৮ বন্দী)। কারাগারে নতুন ভবন নির্মাণ করে বন্দী ধারণক্ষমতা বাড়ানোর সুযোগ নেই।
একই অবস্থা কক্সবাজার জেলা কারাগারেও। চট্টগ্রাম থেকে ১৪৩ কিলোমিটার দূরে কক্সবাজার জেলা কারাগারের আয়তন ১২ দশমিক ৮৬ একর। ৫০০ বন্দীর ধারণক্ষমতার এই কারাগারে গড়ে প্রতিদিন ২ হাজার ৭০০ থেকে ৩ হাজার বন্দী থাকছে। জায়গার অভাবে এখানেও বন্দীদের রাখার জন্য নতুন ভবন নির্মাণ করার সুযোগ নেই। চিঠিতে বলা হয়, কারাগার দুটিতে জায়গার অভাবে উৎপাদন বিভাগের কার্যক্রম (বন্দীদের দিয়ে বাগান করা, পুকুরে মাছ চাষ ও আসবাব তৈরি) বন্ধ রয়েছে। কারা বিধি অনুযায়ী বন্দীদের প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা তথা বন্দীদের মানসিক বিকাশের জন্য খেলাধুলার সুযোগ দিতে না পারায় প্রশাসনিক সমস্যা হচ্ছে। স্বল্প পরিসরে অধিক বন্দী আটক রাখায় তারা নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
কারা মহাপরিদর্শক ৪ হাজার বন্দীর ধারণক্ষমতার নতুন একটি কেন্দ্রীয় কারাগার নির্মাণ করার প্রস্তাব দিয়েছেন। চট্টগ্রাম থেকে ৪৩ কিলোমিটার দূরে পটিয়া বা সুবিধাজনক কোনো স্থানে ন্যূনতম ৫০ একর জায়গা অধিগ্রহণ করে নতুন কারাগার নির্মাণের কথা বলেছেন তিনি।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক ইকবাল কবীর চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ভূমি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে তাঁরা পটিয়া ও সাতকানিয়ায় জায়গা খুঁজতে শুরু করেছেন। এর মধ্যে পটিয়ার কাছে সাতকানিয়া উপজেলায় ৫০ একর সরকারি জায়গা থাকার কথা তাঁকে জানিয়েছেন অতিরিক্ত চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক (ভূমি অধিগ্রহণ) মো. মমিনুর রশিদ। এ ছাড়া পটিয়াতেও কারাগারের উপযোগী জায়গা খুঁজছেন তাঁরা।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক বলেন, কারাগারে বন্দীদের মধ্যে ৭৫০ জন কয়েদি (সাজাপ্রাপ্ত বন্দী) রয়েছে। নতুন কারাগার নির্মিত হলে তাদের সেখানে রাখা যাবে। যেসব বন্দীর নিয়মিত হাজিরা নেই তাদেরও নতুন কারাগারে রাখা হবে। এতে চট্টগ্রাম কারাগারের ওপর চাপ কমবে। বন্দীদের ঠাসাঠাসি করে থাকতে হবে না। এ ছাড়া কক্সবাজার কারাগারে থাকা বন্দীদেরও নতুন এই কারাগারে রাখা যাবে।
কারাগারকে সতি৵কার অর্থে সংশোধনাগার হিসেবে গড়ে তুলতে হলে বন্দীদের মানসিক বিকাশের জন্য খেলাধুলাসহ নানা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রাখতে হবে বলে জানান কারা প্রশাসনের সাবেক উপমহাপরিদর্শক শামসুল হায়দার সিদ্দিকী। মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কারাগারে বন্দীদের এমনভাবে থাকবে যাতে কারাগারে নেওয়া প্রশিক্ষণ দিয়েই তাঁরা মুক্তি পাওয়ার পর জীবিকা নির্বাহ করতে পারেন। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে যেহেতু সব সময় ধারণক্ষমতার কয়েক গুণ বন্দী থাকে, সেখানে নতুন আরেকটি কারাগার নির্মাণ আসলেই জরুরি।