24 July 2020

১৯৭১ মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে অন্যতম এক বীরের গল্প [ মুক্তিযোদ্ধা পর্ব (০২) ]

                              দেশ মানে মা, আর সেই মাকে মুক্ত করতে, মায়ের ডাকে সাড়া দিয়ে, ব্যক্তিগত মোহ বিসর্জন দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন হানাদার বাহিনীর উপর। মা বাবা,অাত্বীয়স্বজনের ভালেবাসাকে জলাঞ্জলি দিয়ে ছুটে যান দেশ মাতৃকার টানে। মহান মুক্তিযুদ্ধের সূচনালগ্ন অতীত থেকেই তিনি মুক্তিযুদ্ধের সাথে অতপ্রোত ভাবে জড়িত। ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে সশরীরে উপস্থিত। মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগী ট্রেনার,একজন মুক্তিযোদ্ধা সংগঠক এবং রনাঙ্গানে যুদ্ধের নেতৃত্ব দানকারী সফল কমান্ডার,একজন গর্বিত পিতা, যশোর জেলার মনিরামপুর উপজেলার হানুয়ার গ্রামের কৃতিসন্তান,বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব ডা. এম এ সামাদ।                                             ১৯৭১ সালে ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে উজ্জীবিত হয়ে,২৫ মার্চ ভয়াল কালরাতের পাকবাহিনীর হাত থেকে পালিয়ে এসে মুক্তিযুদ্ধে যোগদেন এবং সংগঠিত করেন। ২৫ মার্চ রাতে পলাশী,ঢাকা থেকে ড্রেনের ভিতর দিয়ে রক্তের স্রোত হামাগুড়ি দিয়ে রমনা গিয়ে ওঠেন। কোনো রকম প্রাণ হাতে নিয়ে পায়ে হেঁটে বাড়ি ফেরেন। তারপর নিজের সাথে কয়েকজন কে নিয়ে ভারতে চলে যান। সেখানে
গিয়ে নিজেরা সংগঠিত হয়ে,ভারতীয়দের বাড়ি বাড়ি ঘুরে ঘুরে সাহায্য সহযোগীতা নিয়ে নিজেরাই যুদ্ধের প্রশিক্ষণ শুরু করেন। পরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সহযোগীতা বিহার রাজ্যে অফিসিয়ালি ট্রেনিং শুরু করেন।তিনি সহযোগী ট্রেনারের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের ১ম ব্যাচের গর্বিত সৈনিক।  অতপর তিনি ভারতে থেকেই পাকহানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেন। ভারতের নদীয়া, বনগা,পেট্রাপোল সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে যুদ্ধে অংশ গ্রহন করেন। পরে দেশে এসে যুদ্ধ করার দায়িত্ব পান।                               ৮ নং সেক্টরের কমান্ডার বীর উত্তম মেজর মোহাম্মদ আবুল মঞ্জুরের (এম.এ মঞ্জুর) নেতৃত্বে যশোর,মনিরামপুর, রাজগঞ্জ সহ বিভিন্ন অঞ্চলে যুদ্ধ করেন। যুদ্ধের সময় তিনি বিভিন্ন দলের কমান্ডার হিসাবে নেতৃত্ব পালন করেন, পাশাপাশি নতুনদের নিয়ে ব্যাচ তৈরী করতেন এবং প্রশিক্ষণের জন্য ভারতে পৌঁছে দিতেন। প্রায় ২০ টি সম্মুখ যুদ্ধে তিনি জীবন বাজি রেখে অংশ নেন। শরীরে এখনো ক্ষত চিহ্ন দৃশ্যমান। জাতির এ সকল শ্রেষ্ঠ সন্তানদের অপরিসীম সাহসিকতা ও নিরলস পরিশ্রমের ফলে যশোর প্রথম শত্রুমুক্ত হয়। যুদ্ধ পরর্বতী সময়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তে জুনিয়র কমিশন্ড অফিসার (J.C.O) হিসাবে মর্যাদা লাভ করেন। এবং সরকারি খরচে বিদেশ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে লে.কর্নেল হিসাবে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব আসে কিন্তু মা বাবার সম্মতি না থাকায় আর যাওয়া হয় না। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মনিরামপুর উপজেলার যুদ্ধাপোরাধীদের তালিকা করার প্রধান হিসাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। ২০১৪ সালে তিনি পবিত্র হাজ্ব পালন করেন। সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী মহান আল্লাহর নিকট জাতির এই শ্রেষ্ঠ সন্তানের সুস্থতা ও দীর্ঘায়ূ কামনার জন্য প্রার্থনা করবেন।

লেখনঃ তানভীর আহমেদ

0 comments:

Post a Comment