26 July 2020

১৯৭১ মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে অন্যতম এক বীরের গল্প [ মুক্তিযোদ্ধা পর্ব (০৩)]

                         পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও বাংলাদেশের রাজাকার বাহিনীর কাছে, যিনি ছিলেন ডিনামাইট ও সিংহের হুংকারের মত। যিনি দুর্দান্ত গতিতে, অপরিসীম সাহসিকতা নিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তেন, তিনি আর কেউ নন, তিনি যশোর জেলার মনিরামপুর উপজেলার খালিয়া গ্রামের কৃতি সন্তান, অত্যন্ত সাহসী ও শক্তিশালী, জাদরেল সেনানী, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন (ওয়ান টু)। ১৯৭১ সালে মাত্র ১৮ বছর বয়সে দেশ মাতৃকার টানে দেশমাতাকে মুক্ত করতে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। ১৯৬৮ সালে আনসার বাহিনীর ট্রেনিং নেওয়া থাকায় মুক্তিযুদ্ধের সময় অন্যান্য
যোদ্ধাদের প্রাথমিক প্রশিক্ষণ দিতেন। তিনি অত্যন্ত দক্ষতার সাথে যুদ্ধ করতেন। ২৬ শে মার্চে যশোর ক্যান্টনমেন্টে প্রতিরোধযুদ্ধ থেকে শুরু করে ১৬ ই ডিসেম্বর পর্যন্ত সশরীরে যুদ্ধের ময়দানে ছিলেন। রাজগঞ্জ মনিরামপুর,অভয়নগরসহ যশোরের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রায় ১০ টি সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেন। দেশের প্রতি তাঁর এতো টান ছিল এবং যুদ্ধের প্রতি এতটাই নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন যে,নিজের আত্মীয় স্বজন যারা যুদ্ধের বিপক্ষে ছিল তাদের কেও ছাড় দেননি। যুদ্ধের সময় তার কানের খুব সন্নিকট দিয়ে গুলি চলে গিয়েছিল। অল্পের জন্য প্রাণ রক্ষা পেলেও রক্ষা পাইনি তাঁর কান। একটি কানে শুনতে পান না। পরিবারের সদস্য সংখ্যা বেশি হলেও থাকেন বেশ ছোট একটি বাড়িতে। তাঁর ওয়ান টু নাম নিয়ে অনেকের মনে বেশ কৌতূহল জাগে। নামের পিছনে কিছু গল্প শোনা যায় যেমন তাকে হত্যা করার জন্য হুলিয়া জারি করা হয় তখন ঝাঁপা গ্রামের আর একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা বিমানবাহিনীর উইনিং কমান্ডার ফজলুর রহমান তাঁর নাম পরিবর্তন করে (1, 2) রাখেন। আরো শোনা যায় যুদ্ধকালীন সময়ে কমান্ডার ফায়ারিং এর জন্য কাউন্টডাউন করার সময় ওয়ান টু থ্রি বলার আগেই তিনি শত্রুপক্ষকে ফায়ার করতেন। তাই তার নাম হয়েছিল ওয়ান টু। তিনি ক্যাঙ্গারু নামেও বেশ পরিচিত। এ নামের পিছনেও একটা ইতিহাস আছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর যুদ্ধাপরাধীদের ধরার জন্য মনিরামপুর উপজেলার ১৭ টি ইউনিয়নে সাতদিন করে কমান্ডো অভিযান চালান তখন থেকেই তার নাম ক্যাঙ্গারু হয়। বর্তমানে তিনি শারীরিকভাবে কিছুটা অসুস্থ। মহান আল্লাহর নিকট জাতির এই শ্রেষ্ঠ সন্তানের সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু জন্য প্রাণভরে প্রার্থনা করবেন।


লেখকঃ তানভীর আহমেদ

0 comments:

Post a Comment